নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তোফাজ্জলকে

5

‘দুই-তিনজন মিলেই ওরে ওখানে মেরে ফেলছে। এরা হলেন— মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের ২০-২১ সেশনের মোহাম্মদ সুমন, ওয়াজিবুল, ফিরোজ ও জালাল। এদের মধ্যে সুমন, ফিরোজ এবং জালাল সবচেয়ে বেশি মেরেছে। গেস্ট রুমে চোরের হাত বেঁধেছে জালাল। সুমন চোখ বন্ধ করে মেরেছে তাঁকে, মারতে মারতে ও (তোফাজ্জল) পড়ে গেছে। এরপরে পানি এনে তাঁকে পানি খাওয়ানো হলে সে উঠে বসে। এসময় সবাই হাততালি দেয়।’

 

ওই শিক্ষার্থী বলেন, “সবাই খুশি হয় কারণ তাঁকে আবার মারতে পারবে। এরপর আবার শুরু হয় পেটানো। এই দফায়ও সবচেয়ে বেশি মেরেছে ফিরোজ। পরে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের জালাল আসে। জালাল এসে আরও মারতে উৎসাহ দেয়; বলে— ‘মার, ইচ্ছামতো মার; মাইরা ফেলিস না একবারে’। এসময় গ্যাস লাইট দিয়ে পায়ে আগুনও ধরিয়ে দেয়। পরে সুমন এসে তোফাজ্জলের ভ্রু ও চুল কেটে দেয়।”

 

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘পরে ওখানে স্যার (হলের আবাসিক শিক্ষক) আসেন। আমি ওদেরকে অনেক ফেরানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু ওরা মানেনি। এক্সটেনশন বিল্ডিং এর গেস্ট রুম থেকে থেকে যখন তাঁকে বের করা হয় তখন স্যার এসে পড়ছেন। মারধরে তোফাজ্জলের ডান পা এবং বাম পায়ের মাংস খুলে পড়ে গেছে তখন। অনেকে তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। আমি বলি কাপড় আনো, ওর পা বেঁধে দেই। কারণ ব্লিডিং হইলে তো সেন্সলেস হয়ে যাবে। পরে কাপড় এনে একটা জুনিয়র পা বেঁধে দেয়।’

 

ওই শিক্ষার্থী জানান, ‘মারধরকারীরা চেষ্টা করছিল মারপিট করে তাঁর স্বীকারোক্তি নিবে যে চুরি হওয়া ফোন সেই নিয়েছে। মারধরের এক পর্যায়ে দুই-তিনটা ফোন নম্বর দেয় তোফাজ্জল। সেই নাম্বারে ফোন দিলে অপর পাশ থেকে জানানো হয় মানসিক বিকারগ্রস্ত। কিন্তু ওরা (শিক্ষার্থীরা) বিশ্বাস করতে চায়নি। সেখানে আসা শিক্ষকদের সামনেও তোফাজ্জলকে পেটানো হয়। শিক্ষকরা বাধা দিতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

তোফাজ্জল
নিহত তোফাজ্জল ও খুনিরা

তিনি আরও জানান, ‘পরে তোফাজ্জলকে হলের মেইন বিল্ডিংয়ের গেস্টরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে জালাল প্রচুর মারে তাঁকে। বুট জুতা পরে এসে তোফাজ্জলের আঙ্গুল মাড়িয়ে ছেঁচে ফেলেন। আমি বলি, ভাই এগুলো কি করেন? তা শুনে হেসে দেয় জালাল। অনেকবার বলেছি, তারপরও সে বারবার হাতের আঙুল মাটিতে বিছিয়ে মাড়িয়েছে। তাঁর গোপনাঙ্গে লাঠি দিয়া জোরে জোরে আঘাত করছে জালাল। অনেক সিনিয়র ভাইয়েরা এসে তাদের ফেরানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ওরা কিছুতেই মানেনি।’

 

অনুসন্ধান ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, তোফাজ্জলকে সবচেয়ে বেশি মারধর করেছেন ছাত্রলীগের সদ্য পদত্যাগ করা উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল আহমেদ, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সুমন, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ফিরোজ, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের আব্দুস সামাদ, ফার্মেসি বিভাগের মোহাম্মদ ইয়ামুজ জামান এবং পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনিস্টিউটের মোত্তাকিন সাকিন। এরা সবাই ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থী।