বিএনপির গ্রুপিংয়ে নাটোরে জেলা যুবদল নেতা মালেক হাজতে!

জেলা যুবদল নেতা মালেক

জেলা প্রতিনিধি, নাটোর: ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার মিথ্যা মামলায় নাটোর জেলা যুবদল নেতা শফিকুল ইসলাম মালেককে জেল হাজতে প্রেরণের এই দৃশ্য সত্যি বেমানান। এই দৃশ্য দেখার পর নাটোরে বিএনপি’র নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণার সঞ্চার হয়েছে। যে মালেক দলের দুর্দিনে কয়েক ডজন রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা, পুলিশি হামলা, হুলিয়া ও গুমের আতঙ্ক মাথায় নিয়ে, ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে দীর্ঘ ১৬ বছর কৌশলে গ্রেফতার এড়িয়ে দুঃসহ মানবেতর জীবনযাপন করেছেন।অথচ আজ ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশে হাসিনার মুখোশধারী দালালের ষড়যন্ত্রে বিনা দোষে সে জেল হাজতে! দলের প্রকৃত ও ত্যাগী নেতা-কর্মীরা যত দ্রুত সম্ভব মালেকের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে বলেন, যাদের ষড়যন্ত্রে আজ মালেক জেল হাজতে, তাদের কাউকে এই নাটোরের মাটিতে ক্ষমা করা হবে না। তারা ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর। তারা দলের ভিতরে মুখোশধারী। যে কোন ভাবেই হোক তাদেরকে দল থেকে বিতাড়িত করতে হবে। এ সময় স্থানীয় যুবদলের এক নেতা মালেকের জামিন বাতিলের পিছনে রুহুল কুদ্দুস দুলুর হাত রয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, দুলুর বিশ্বস্ত দেওয়ান শাহিন মালেকের জামিন বাতিলে আদালতের স্বাভাবিক কাজে বাধা সৃষ্টি করে।

অপর আরেক যুবদল নেতা বলেন, গত ১৬ বছর রাজপথে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার পতন আন্দোলনে রাজপথ কাঁপানো ত্যাগী নেতা হলেন নাটোর জেলা যুবদলের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মালেক। যিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকেও দল ত্যাগ করেনি। তিনি জীবন বাজি রেখে এবং জেল- জুলুম, নির্যাতন- নিপীড়ন উপেক্ষা করেই বিএনপিকে সুসংগঠিত করেছেন। তিনি বিগত সকল আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন সবার আগে। আর আজকে দলের জন্য আন্দোলন সংগ্রামের উপহার হিসেবে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার দেওয়া মিথ্যা উদ্দেশ্য প্রণোদিত, ষড়যন্ত্রমূলক বিস্ফোরক দ্রব্যের একটি মামলায় তাকে জেলে যেতে হলো। মামলায় মালেকের নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু হওয়ায়, সে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ৯ জুলাই, আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। কিন্তু সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস দুলুর সাথে তার মতের বিরোধ থাকায় দুলুর লোকজন আদালতের স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে মালেকের জামিন বাতিলে ভূমিকা পালন করে। আদালত অবশেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। অথচ মামলাটি ছিল জামিন যোগ্য।

জেলা যুবদলের শীর্ষ এক নেতা বলেন, বিগত সময়ে এই মালেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া রাজপথের প্রত্যেকটি আন্দোলন সংগ্রাম ও দলীয় সমস্ত কর্মসূচি শত শত কর্মী সমর্থক নিয়ে সফলভাবে পালন করেছেন। শফিকুল ইসলাম মালেক দলের রাজনীতির জন্য কোনদিন আওয়ামী প্রেতাত্মার সাথে আপোষ করেননি। এজন্য একাধিকবার তিনি কারাবরণ করেছেন।রাজনৈতিক কারণে স্বাভাবিক জীবন যাপন ও আরামের ঘুমকে তিনি ত্যাগ করেছেন হাসিমুখে। পরিবারের সদস্যের সাথে নিজ বাড়িতে একটি রাতের জন্যেও ঘুমোতে পারেননি মালেক ভাই।

জেলা যুবদল নেতা মালেক

এদিকে নাটোরের অসাংগঠনিক রাজনীতির জনক স্বঘোষিত বাবা নেতা তার পেটুয়া বাহিনীর প্রধান দেওয়ান শাহিনের নেতৃত্বে আদালতের স্বাভাবিক কাজে বাধা সৃষ্টি করে, জামিন নামঞ্জুরে আদালতকে বাধ্য করার খবর এখন পুরো নাটোর জুড়ে। নাটোরের সুশীল সমাজ মনে করেন, আদালতের কাজে বাধা সৃষ্টি, প্রকারান্তরে আদালত অবমাননার শামিল। এর জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোর্ট ব্যবস্থা নিতে পারেন।
অপর একটি সূত্র জানায় মালেকের জামিনের ক্ষেত্রে সরকারি পিপি, দুলুর ভাই রুহুল আমিন তালুকদার টগরের ভূমিকাও ছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলের পিপিদের মতো। মালেকের জামিনের বিষয়ে রুহুল আমিন তালুকদার টগরের সর্বোচ্চ ভূমিকা নেয়ার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারণে এবং তার ভাই দুলুর অনুরোধে সে ছিল নিশ্চুপ। যদিও বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দেওয়া সকল রাজনৈতিক মামলা ছিল মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। ফ্যাসিস্ট আমলের সব রাজনৈতিক মামলা ৫ আগষ্টে রাষ্ট্রীয় পটপরিবর্তনের পর পর্যায়ক্রমে বাতিল প্রক্রিয়ায় যাওয়ার কথা। কিন্তু ব্যতিক্রম নাটোরে।

উল্লেখ্য, এই মামলায় ইতিমধ্যে সকল আসামী জামিনে আছেন। মালেক বিগত দিনে কোর্টে হাজির হওয়ার পরিবেশ না থাকায় এবং জীবনের হুমকি থাকায় জামিন না নিয়ে পালিয়ে বেড়ান। বর্তমানে অনুকূল পরিবেশে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কোর্টে আত্মসমর্পণ করলে নাটোরের স্বঘোষিত বাবা নেতা, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর হিসেবে পরিচিত তার পেটুয়া বাহিনীর হস্তক্ষেপে মালেকের জামিন বাতিল সত্যি দুঃখজনক। তাদের অপতৎপরতায় আজ নাটোরের সর্বস্তরের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও সাংগঠনিক অবস্থা এবং জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এমতাবস্থায় নাটোরের স্বঘোষিত বাবা নেতার অসংগঠনিক কর্মকান্ড ও তার পেটুয়াবাহিনীর অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের জনগণ দলীয় হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।